Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
বাণিজ্যিক ভাবে রূপসায় প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ : বাম্পার ফলন
ডাউনলোড

খুলনার রূপসায় বাণিজ্যিক ভাবে প্রথমবারের মতো তরমুজের আবাদ হয়েছে। এতে বাম্পার ফলনে কৃষকের মুুখে হাসি ফুটেছে। গেল বছর ধান চাষে আশানুরূপ ফলন না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েন কৃষকরা। এ সময় তরমুজ চাষে পরামর্শ দিয়ে সার্বিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। কৃষকদের ভাষ্যমতে তরমুজে বাম্পার ফলন হওয়ায় আগামী মওসুমে তরমুজ চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবেন কৃষকরা। আগামীতে তরমুজ চাষে এ এলাকায় বিপ্লব ঘটবে বলে দাবি স্থানীয়দের। 

রূপসা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়নের জোয়ার এলাকার বাসিন্দা মৃত দৌলত আলী শেখের ছেলে চাষি মো. ইমরান শেখ ও তার ভাইপো একই গ্রামের বাসিন্দা মো. ইব্রাহিম শেখের ছেলে মো. টিটো শেখ গেল বছর ধান চাষে আশানুরূপ ফলন পায়নি। অনেকটা হতাশ হয়ে তারা পরামর্শ নেন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরে। এ সময় তাদের তরমুজ চাষের পরামর্শ দিয়ে সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন কৃষি অধিদপ্তর। কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তারা প্রথমবারের মতো আট একর জমিতে সুইট ড্রাগন (সাদাটে) ও পাকিজা (কালো) এই দুই জাতের তরমুজের আবাদ শুরু করেন। মাছি পোকা দমনে ক্ষেতে স্থাপন করা হয় সেক্স ফেরোমন ফাঁদ। বিঘাপ্রতি উৎপাদন ব্যয় হয়েছে বিশ হাজার টাকা। ফলনও হয়েছে বাম্পার। গড়ে তরমুজের ওজন হয়েছে প্রায় চার কেজি। ক্ষেত থেকে পনের টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে এসব তরমুজ। ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক তরমুজ বিক্রি করেছেন চাষি ইমরান শেখ ও টিটো শেখ। সাধারণত ডিসেম্বরের শেষে তরমুজের বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের তিনমাস পর তরমুজ বিক্রি শুরু হয়।  

জোয়ার গ্রামের মো. ইকবাল শেখ বলেন, ‘গত বছর ধানের ফলন ভালো না হওয়ায় এলাকার কয়েকজন কৃষক তরমুজ আবাদে ঝুঁকে পড়েন। তিনি বলেন, ফলনও হয়েছে বাম্পার। ফলে আগামীতে কৃষকরা তরমুজ আবাদে বেশি হয়ে উঠেছে।’ 

তরমুজ চাষি মো. ইমরান শেখ বলেন, ‘গেল বছর ধান চাষে ফলন ভালো না হওয়ায় উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করেন কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফরিদুজ্জামান। এমনকি ক্ষেত শুরু করা থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিতেন তিনি। ফোন করলেই উনি আমাদের ক্ষেতে চলে আসেন। এখনো উপজেলা কৃষি অফিস থেকে খোঁজ-খবর নিতে আসেন। আর উপ-সহকারী কৃষি অফিসার তো প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর রাখেন। যে কারণে তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তরমুজের দাম একটু কম। তারপরও ক্ষেত থেকে ১৫ টাকা কেজিদরে ৫ শতাধিক তরমুজ বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা না পেলে কোনভাবেই চাষাবাদ করে এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। আগামীতে আরো বেশি জমিতে তরমুজের আবাদ করার ইচ্ছে রয়েছে বলে জানালেন তিনি।   

উপজেলার মৈশাঘুনি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার নীতিশ চন্দ্র বালা বলেন, প্রথমবারের মত তরমুজ চাষে আগ্রহী ইমরান ও টিটোকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহায়তা করা হয়েছে। এমনকি আমি এই ব্লকের দায়িত্বে থাকার সুবাদে প্রায় প্রতিদিন খোঁজ-খবর নিয়েছি। তিনি বলেন, তরমুজ লাভজনক ফসল। তাই কিভাবে ফলন ভালো হয় সে ব্যাপারে কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক তদারকি করেছে। 

রূপসা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘প্রথমবারের মতো জোয়ার এলাকার কয়েকজন কৃষক তরমুজ চাষ করে আগাম ফলনও  পেয়েছে। এদের সাফল্যে আগামীতে এ অঞ্চলের কৃষকরা তরমুজ আবাদে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে অনেকেই এ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে তিনি জানান।’ 

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘রূপসার জোয়ার এলাকার কৃষকরা গত কয়েক বছর ধানে ভালো ফলন না পেয়ে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ে। তারা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে তরমুজ চাষের পরামর্শ দেয়া হয়। এতে তারা আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আমরা ভেবে দেখলাম, দেশের অন্যান্য স্থানে যদি তরমুজের বাম্পার ফলন হয় তা’হলে রূপসায় হবেনা কেন। সে মোতাবেক এখানে ৮ একর জমিতে কৃষক ইমরান ও টিটো তরমুজের চাষ শুরু করে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রূপসায় এটা প্রথম আবাদ। এদেরকে যত রকম সাপোর্ট দরকার তার সবই দিয়েছি। মৈশাঘুনি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার নীতিশ চন্দ্র বালা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার শেখ সাখাওয়াত হোসেনসহ আমি নিজে প্রতিনিয়ত খেতে এসে সার্বিক তদারকি করেছি। তিনি বলেন, এদের সফলতা দেখে আগামীতে এ এলাকায় তরমুজ চাষে আগ্রহী অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে।